শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৪২ অপরাহ্ন
লোকমান হাকিম : “করোনাকালে নারী নেতৃত্ব, গড়বে নতুন সমতার বিশ্ব” প্রতিপাদ্যে আজ (৮ মার্চ) পালিত হবে আন্তর্জাতিক নারী দিবস। এই দিনটিকে বিশ্বের প্রতিটি নারীর জন্য একটি বিশেষ দিন হিসেবে পালন করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রের মতো কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন স্তরের নারীদের মনেও রয়েছে এ দিনটিকে ঘিরে বিশেষ ভাবনা। তেমন পাঁচ নারীর ভাবনা তুলে ধরা হলো:
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ নেত্রী ও সমাজকর্মী নাজনীন সরওয়ার কাবেরী বলেন, আমাদের সমাজের নারীদের আলোর পথ দেখাতে হবে। তারা শিক্ষিত ও সাবলম্বী হয় একটি নির্যাতনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। যদিও বলা হয়, ১৮ বছরের আগে বিয়ে নয়। তবে আমি মনে করি নারীদের ২০ বছর পর্যন্ত প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
কাবেরী বলেন, গ্রামাঞ্চলে নারীদের যৌতুকের জন্য হত্যা করছে, পরে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়। কিন্তু এর পেছনে থাকে অন্য কারণ। আমাদের সমাজে প্রতিদিন জনদূর্ভোগ বাড়ছে, জনপ্রতিনিধির সংখ্যা বেশ সীমিত। বিভিন্ন মানুষের বিভিন্ন দেয়া তথ্যে জনপ্রতিনিধিরাও বিভ্রান্ত হচ্ছেন। শোষণমুক্ত ও উন্নয়নের সমাজ গঠনে আমরা কাজ করছি।
নারী দিবসে একটাই প্রত্যাশা, আগামীতে এমন একটি বাংলাদেশ চাই যেখানে প্রতিটি নারী মানুষ হিসেবে ঘুরে দাঁড়াবে। দেখুন, প্রতিটি নারীই কিন্তু নির্যাতিতা। বিবাহ প্রথায় ক্লাবে বিয়ে করিয়ে কত হাজার বরযাত্রী নিয়ে যেতে পারে সেই প্রতিযোগিতায় আমরা মেতেছি। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর পিতার জমি বিক্রি করে মেয়ে দিতে হচ্ছে। পুরুষদের সেই প্রথা থেকে সরে আসতে হবে।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে নারী ও কিশোরীদের কাজ করে ২০২০ সালে বিবিসির ১০০ প্রভাবশালী নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া রামুর মেয়ে রিমা সুলতানা রিমু বলেন, “প্রত্যেকটা নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা জরুরী। নারীরা সঠিকভাবে যেন নিজেদের সম্পর্কে জানতে পারে সে জন্য তাদের উদ্ধুব্ধ করতে হবে। প্রত্যেক জেলায় যেসব মেয়ে অল্প বয়সে শিক্ষা থেকে ঝরে পড়ে তাদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করার দাবি জানাই। তাদের স্বাক্ষরতামূলক শিক্ষার আওতায় আনার আহবান জানাই। নারীর প্রতি সহিংসতা ও বাল্যবিয়ে নিরসনে সমাজের সকলের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে।”
নারী দিবসে আমার একটাই প্রত্যাশা, “প্রত্যেক নারী বৈষম্যের স্বীকার না হয়ে তারা যেন সব জায়গায় মাথা উঁচু করে বাঁচতে পারে।”
নারী উদ্যোক্ত শাহরিন জাহান ইফতা বলেন, বাংলাদেশে ২০০৯ সাল থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে তথ্য-প্রযুক্তির সুবিধা শহর থেকে ও গ্রাম পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। সুয়োগ হয়েছে ই-কমার্স সম্প্রসারণে। তৃণমূলের মানুষও ধীরে ধীরে এতে সম্পৃক্ত হচ্ছে। ই-কমার্সে হাজারও নারী স্বাবলম্বী। ঘরে বসে তারা তাদের পণ্য অনায়াসে বিক্রি করছে। নারী আজ অবলা নয়, নিজের অবস্থান নারীরা নিজের যোগ্যতায়। আমিও তাঁর ব্যতিক্রম নয় বেছে নিয়েছি ই-কমার্স।
তিনি বলেন, আমার সংগঠন গ্লোরিয়াস ওমেন্স এন্টারপ্রেনার অব বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে ২০০ নারী উদ্যোক্তা কাজ করছে। তারা তাদের পণ্যের ছবি পোস্ট করে তাদের পণ্য সেল করছে। প্রতি সপ্তাহে আড়াই লক্ষ টাকার পণ্য বিক্রি করেছে নারী উদ্যোক্তারা।
আমি ভবিষ্যতে দু’বাংলার রাঁধুনি নিয়ে বই ‘রসনাবিলাস’ এর অর্থ যাবে আমাদের রসনাবিলাস ট্রাষ্টে। আমাদের ট্রাষ্টের অনুমোদনের কাজ চলমান। এই ট্রাষ্টের একটা লক্ষ্য আমরা নারীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবো। অসহায়ন নারীদের পাশে দাঁড়ানো।
আমার এতদূর আসার পেছনে পরিবারের অনেক সাপোর্ট পেয়েছি। পেছনের গল্পে ছিলো আমার সাপোর্টিভ স্বামী। আজ সে না হলে আমার এতোদূর আসা সম্ভব ছিলো না।
নারী দিবসে আমার প্রত্যাশা, কোন নারী পিছিয়ে থাকবে না, নারীরা শালীনতার মধ্য থেকে নিজের অবস্থান নিজেকেই গড়ে নিতে হবে। গৃহিণীদের উদেশ্যে বলবো, গৃহিণীদের পাশে একটি পদবি তৈরি করুন ‘নারী উদ্যোক্তা’। আজ আমরা পুরুষদের কাঁধ মিলিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে না ছুটে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে গড়ে উঠার জন্য।
কক্সবাজারের উপকুলীয় অঞ্চলের অসহায় নারী-কিশোরীদের নিয়ে কাজ করা সাবরিনা রহিম প্রিয়া বলেন, পড়াশোনার পাশাপাশি নিজেকে গড়ে তুলতে এইচএসসি পরীক্ষার পর থেকে উপকুলীয় অঞ্চলের নারীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। মহামারি করোনার কক্সবাজারের ৫ জনকে নিয়ে ডেলিভারি টিম গড়ে তুলি। যারা অনলাইন উদ্যোক্তাদের পণ্য সরবরাহ করতো।
এর পাশাপাশি সাগরে মাছ শিকার বন্ধ থাকা অবস্থায় কক্সবাজার সদরের চৌফলদন্ডীর ১০ জেলে পরিবারের নারীকে সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে সহায়তা করেছি। ওই পরিবারগুলো যেন অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে পারে। ভবিষ্যতে জয়বায়ু সংকট মোকাবেলায় উপকুলীয় অঞ্চলের নারীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করতে চাই।
নারী দিবসে আমার চাওয়া, ‘নারী হবো, তবে পুরুষ বিদ্বেষী নয়।’
তরুণ নারী জলবায়ুকর্মী তাসকিয়া সুলতানা শাম্মী বলেন, আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়াশোনা করছিলাম তখন থেকে শিশুদের নিয়ে কাজ করা ন্যাশনাল চিলড্রেন টাস্ক ফোর্স (এনসিটিএফ) এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন আলোচনায় জলবায়ু পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাটি চোখে পড়ে। সে থেকে জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ে আগ্রহ বেড়ে যায়। একজন নারী হিসেবে এই সংকট মোকাবেলায় মাঝে মাঝে একা মনে হলেও আমি আশাবাদী। আমি চাই, আমার মত যারা আছে তারাও এ বিষয়ে সোচ্চার হবে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে উপকুলের কিশোরীদের মধ্যে যেসব সমস্যা দেখা যায় তা নিরসনে সকলকে এগিয়ে আসবে। সুতরাং, এই সমস্যা সমাধানে আমাদের লৈঙ্গিক সমতা নিশ্চিত করে মাঠ পর্যায়ে কাজ করে যেতে হবে।
নারী দিবসে প্রত্যাশা, “সহানুভুতিশীল বাংলাদেশ এবং পরিবেশবান্ধব হোক আগামীর পৃথিবী”।
.coxsbazartimes.com
Leave a Reply